ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাভ। যথাযথ লাভের জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নতুন বিনিয়োগ, যা ব্যবসা বাড়াতে সহায়তা করে। কিন্তু উদ্যোক্তার পক্ষে চাইলেই নতুন বিনিয়োগের অর্থ যোগাড় করা কষ্টকর হয়ে যায়। এর একটি সহজ সমাধান হতে পারে ব্যাংক লোন। কিন্তু বেশিরভাগ উদ্যোক্তারই ব্যাংক লোনের প্রতি এক ধরণের ভীতি কিংবা অনীহা কাজ করে। এর কারণ খুঁজতে এবং উদ্যোক্তার সকল জিজ্ঞাসার সমাধান দিতে ব্যাংক লোনই হচ্ছে আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু।
কেন ব্যাংক লোন | When we should take bank loan?
নানা কারণে একজন উদ্যোক্তার ব্যাংক লোনের প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় ব্যবসায় এমন এক সময় চলে আসে যখন চাইলেও কারো একার পক্ষে যথেষ্ট লাভ করা সম্ভব হয় না যা দিয়ে আগের চাইতে বড় আকারে ব্যবসা করা যায়। স্বাভাবিক ভাবে তখন দরকার হয় নতুন বিনিয়োগের। কিন্তু চাইলেই একজন বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। তখন উদ্যোক্তার ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ব্যাংক লোন।
আবার এমনও হতে পারে যে কোন উদ্যোক্তা নতুন কোন প্রোজেক্ট শুরু করতে চান। কিন্তু তার পূর্বের ব্যবসা থেকে যে লাভ হয় তা দ্বারা নতুন কোন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। তখন তার বিকল্প কোন পন্থা খুঁজে বের করতে হয়। তখন ব্যাংক লোনই হতে পারে একটি সমাধান।
অনেক সময় দেখা যায় ব্যবসায়ের পরিচালন ব্যয় এবং ফিক্সড কষ্ট বেশি হওয়ায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিক্রয় না করতে পারলে আসলে লাভ করাই যাবে না। ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ বিক্রয় করতে গেলে উৎপাদন বাড়াতে হবে আবার সাথে বিক্রয় খরচ ও বাড়াতে হবে, এমন পরিস্থিতে ব্যাঙ্ক লোন নেওয়া হয় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ফাইনাঞ্চিং করার জন্য। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ধরা যাক কোন উদ্যোক্তা মাছ চাষ করতে ইচ্ছুক। মাছ চাষের আগে তার পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। এর জন্য যা কিছু লাগবে তা ফিক্সড কষ্টের অন্তর্ভুক্ত। ধরা যাক পুকুর প্রস্তুত করতে তার ৩ লাখ টাকা লাগলো। এখন পুকুরের ধারণ ক্ষমতা ৫ টন হয়, এবং ওই ব্যক্তি যদি ২ টন মাছ চাষ করে, তাও তার ওই ৩ লাখ টাকার পুরোটাই খরচ হবে। এই তিন লাখ টাকা হচ্ছে তার ফিক্সড কষ্ট। এখন সরাসরি প্রতি টন মাছ চাষ করতে ৫০ হাজার টাকা করে লাগলে ২ টন মাছ চাষে তার খরচ হবে ১ লাখ টাকা। এই ১ লাখ টাকা হচ্ছে তার ভ্যারিয়েবল কষ্ট। তাহলে ওই উদ্যোক্তার মোট খরচ হয় ৪ লাখ টাকা। তাহলে প্রতি টন মাছে তার মোট খরচ হয় ২ লাখ টাকা। প্রতি টন মাছ তাকে বিক্রি করতে হবে কমপক্ষে ২ লাখের বেশি টাকায়।
এখন যদি সে ৫ টন মাছ চাষ করে, তাহলে শুধু মাছ চাষে তার খরচ হয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ভ্যারিয়েবল কস্ট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফিক্সড কষ্ট ৩ লাখ টাকাই থাকবে। তাহলে মোট খরচ ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি টন মাছ চাষে এখন মোট খরচ হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, যেখানে আগে হত ২ লাখ টাকা। প্রতি টনে সাশ্রয় হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ শুরুতে বেশি খরচ হলেও সব মিলিয়ে উদ্যোক্তার লাভের পরিমাণ বেশি হবে যদি সে উৎপাদন বেশি করে। কিন্তু তার জন্য শুরুতে ওই উদ্যোক্তার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দরকার, যা তার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নাও হতে পারে। এর সহজ সমাধান হতে পারে ব্যাংক লোন।
ব্যাংক লোন সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের এক ধরণের নেতিবাচক ধারণা কাজ করে। সবার মনে এক চিন্তা থাকে যে লোন নিয়ে কোন ঝামেলায় পড়তে হয় কিনা। এর প্রধান কারণ মানুষের ব্যাংক লোন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণার অভাব। অনেকেই মনে করে ব্যাংক লোন নেয়া খুবই ঝামেলার ব্যাপার এবং এর জন্য প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু আসলে তা নয়। ব্যাংক লোনের জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই ব্যাংক লোন পাওয়া সম্ভব।
অনেকের মনে আরো ভাবনা থাকে যে ব্যাংক লোন নিয়ে তা পরিশোধ করা খুবই কষ্টকর। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট হারে ইন্টারেস্ট চার্জ করে যা সহজেই মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা সম্ভব। এর জন্য কেবল দরকার সঠিক সময়ে প্রতি মাসে কিস্তির টাকা জমা দেয়া।
ব্যাংক লোন তাদের জন্য নয় যারা ঋণখেলাপি, অর্থাৎ যাদের উদ্দেশ্যই থাকে ঋণকৃত অর্থ ফেরত না দেয়া। এ রকম অনেকেই আছে যারা ব্যাংক থেকে এক কথা বলে লোন নেয়, কিন্তু বাস্তবে করে ভিন্ন কিছু। এমনও দেখা যায় যে খামার করার কথা বলে লোন নিয়ে তা খরচ করা হয়েছে মেয়ের বিয়ের যৌতুক দিতে। যদি সঠিক ব্যবহার না করা হয়, তাহলে কিভাবে লোন সঠিক সময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হবে?
উদ্যোক্তার সততা এবং তার পরিশ্রম ব্যবসায় যে লাভ এনে দেয়, তা দ্বারা সহজেই তিনি লোন পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন। পূর্বের উদাহরণ থেকে দেখা যায়, যদি উদ্যোক্তা ব্যাংক লোন নিয়ে তার সঠিক ব্যবহার করেন, তাহলে তার ব্যবসায় আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাভ করা সম্ভব। উক্ত উদাহরণে উল্লেখিত উদ্যোক্তার প্রতি টনে ৯০ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। তাহলে তিনি যদি আগের দামে মাছ বিক্রি করেন, তাহলে তার প্রতি কেজিতে ৯০ টাকা অতিরিক্ত লাভ হয়, যা দ্বারা সহজেই তার পক্ষে লোন পরিশোধ করা সম্ভব।
ব্যাংক লোন নিতে অসুবিধার কারণ (Major Challenges for Applying for Bank Loan)
যে সকল কারণে সাধারণত ব্যাংক লোন এর জন্য আবেদন করা যায় না সেগুলো হচ্ছে ব্যবসার কোন নিবন্ধন না থাকা, অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন না থাকা। অনেক উদ্যোক্তাই শুরুতে ব্যবসা রেজিস্ট্রেশন করে না। পরবর্তীতে যখন লোনের জন্য আবেদন করা হয়, তখন দেখা যায় যে ওই ব্যবসা নিবন্ধিত না। অনিবন্ধিত কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ব্যাংক লোনের জন্য আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। দ্বিতীয় সঠিক ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট না থাকা। লোনের জন্য কমপক্ষে তিন বছরের সকল আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড থাকতে হয়।
ব্যাংক লোন নিতে যা যা প্রয়োজন (Eligibility Criteria for Bank Loan)
ব্যবসা নিবন্ধিত কিনাঃ
ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য সর্ব প্রথম দরকার ট্রেড লাইসেন্স। ট্রেড লাইসেন্স ব্যতীত কোন উদ্যোক্তা লোন গ্রহণ করতে পারবেন না। ট্রেড লাইসেন্সে উদ্যোক্তার নাম, ঠিকানা উল্লেখিত থাকে যেটা ব্যাংক তার প্রাথমিক পরিচয় হিসেবে গ্রহণ করে। কাউকে ধার দেয়ার আগে আমরা যে রকম তার সম্পর্কে খোঁজ নেই, সে ভাবে ব্যাংক ঋণ প্রদানের আগে উদ্যোক্তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার মাধ্যম হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে। তাই সর্ব প্রথম ব্যবসা নিবন্ধন করা প্রয়োজন। ট্রেড লাইসেন্স শুধু থাকলেই হবে না প্রতি বছর নবায়ন ও করতে হবে। আপনার ব্যবস্যার ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত যেকোন জিজ্ঞাসায় সঠিক পরামর্শ এবং নির্দেশনা পাবেন এসএমই ভাই থেকে।
-
E-TIN For Firm৳ 1,000.00
-
Renew Trade License For Dhaka CitySale Product on sale
৳ 2,000.00৳ 1,000.00Rated 5.00 out of 5 based on 6 customer ratings -
New Trade License for Dhaka City৳ 3,500.00Rated 5.00 out of 5 based on 3 customer ratings
ঠিকানা যাচাইঃ
পরবর্তীতে ব্যাংক যা করে তা হচ্ছে ব্যবসার ঠিকানা ভেরিফিকেশন, অর্থাৎ আসলেই ওই ব্যবসার কোন ফিজিক্যাল আইডেন্টিটি আছে কিনা তা দেখে। এর জন্য ব্যাংক কোন ব্যবসার রেন্টাল ডিল, অর্থাৎ উদ্যোক্তা ও তার ভাড়াকৃত ভবনের মালিকের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তা দেখতে চায়। এটা শুধু মাত্র ভাড়াকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। কেউ যদি নিজের বা পারিবারিক সম্পত্তি ব্যবসার জন্য ব্যবহার করে তাহলে তার দলিল ব্যাংক লোন নেয়ার আগে প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হয়।
সঠিক ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট আছে কিনাঃ
ব্যবসার ইনকাম স্টেটমেন্ট ব্যাংক লোনের জন্য একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট। ইনকাম স্টেটমেন্ট হতে ব্যবসার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ব্যাংক ধারণা পায়। স্বাভাবিক ভাবেই একটি লাভজনক ব্যবসাকে লোন দিতে যে কোন ব্যাংকের বেশি আগ্রহ থাকে। তেমনি কোন ব্যবসায় যদি সব সময় লস হতে থাকে তাহলে তার ব্যাংক লোন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সাধারণত ৫ লাখ টাকার অধিক লোনের জন্য TIN, অর্থাৎ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রয়োজন। এছাড়াও BIN বা বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, যা ভ্যাট প্রদানের জন্য দরকার, তাও প্রয়োজনে ব্যাংক চাইতে পারে।
কমপক্ষে তিন বছরের লেনদেনের রেকর্ড আছে কিনাঃ
ব্যাংক লোনের পূর্বে ব্যাংক কোন উদ্যোক্তার ব্যাংক ট্রানজেকশনের রেকর্ড দেখতে চায়। কোন উদ্যোক্তা কার সাথে লেনদেন করছে, কি পরিমাণ লেনদেন করছে, কি কারণে লেনদেন করছে ইত্যাদি ব্যাংক লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
গ্যারান্টরঃ
গ্যারান্টর হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তি যে ব্যাংককে নিশ্চয়তা দেবে যে লোন গ্রহণকারী ব্যক্তি সঠিক সময়ে তা ফেরত দেবে। কোন ব্যক্তির গ্যারান্টর যদি এমন কেউ হয় যার ঐ ব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে, কিংবা যার ঐ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর লেনদেন করা হয়, তাহলে তার লোন পেতে সুবিধা হয়। কিন্তু গ্যারান্টরের কিছু ঝুঁকি থাকে। কোন কারণে লোন গ্রহণকারী তা ফেরত দিতে না পারলে গ্যারান্টর আইনত সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। তাই কেবল তাদের জন্য গ্যারান্টর হওয়া উচিত যারা পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও মর্টগেজ, অর্থাৎ জমি, বাড়ি ইত্যাদি সম্পত্তি বন্ধক রেখে, কিংবা লোনকৃত টাকার কমপক্ষে ১০% ফিক্স ডিপোজিট রেখেও লোন নেয়া যায়। এছাড়া আগে লোন নিয়ে তা যথাযথ সময়ে পরিশোধ করলে পরবর্তীতে লোন পেতে সুবিধা হয়।
ব্যাংক লোনের জন্য ব্যবসার শুরু থেকেই একজন উদ্যোক্তার প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যবসার সকল লেনদেনের সঠিক হিসাব রাখতে হবে। আয় ও ব্যয়ের সকল হিসাব রাখা প্রয়োজন, যার জন্য সঠিক একাউন্টিং জানা দরকার। সঠিক ফিন্যান্সিয়াল রেকর্ড রাখা প্রয়োজন, যা দ্বারা ব্যবসার সঠিক চিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ সব কিছুই উদ্যোক্তার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে উদ্যোক্তাদের পাশে আছে SME Vai। SME Hishab সফটওয়্যার দ্বারা একজন উদ্যোক্তা সহজেই তার সকল ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্টের রেকর্ড রাখতে সক্ষম হবেন বিনা খরচে।