fbpx

আপনার ব্যবসা কতখানি লাভজনক?

আপনার-ব্যবসা-কতখানি-লাভজনক

আপনার ব্যবসা কতখানি লাভজনক?

Facebook
LinkedIn
Pinterest
Twitter

“লাভ” ব্যবসার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত একটি শব্দ। যে কোন ব্যবসারই প্রধান উদ্দেশ্য হল লাভ। লাভ করার জন্যই সবাই ব্যবসায় করে। জেনেশুনে কেউ আসলে ব্যবসায় লস করতে চায় না। কিন্তু আসলেই কি ব্যবসায় লাভ হচ্ছে? লাভ হলেও বা হচ্ছে কতটুকু? তাহলে দিন শেষে হিসাবের খেরো খাতায় কেন তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না? এ সব কিছুর উত্তর খুঁজতেই আজকের এই রচনার অবতারণা।

লাভ আসলে কি?

এক কথায় বলতে গেলে লাভ হচ্ছে আয় আর ব্যয়ের পার্থক্য। অর্থাৎ আমরা যদি ১০ টাকা দিয়ে কোন জিনিস কিনে ২০ টাকায় বিক্রয় করি তবে ১০ টাকা আমাদের লাভ হবে। কিন্তু লাভের ধারণা এত সহজে প্রকাশযোগ্য নয়। লাভ আসলে কি বুঝতে গেলে এর প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। সঠিক ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরির জন্য এবং ফিন্যান্সিয়াল হেলথ মনিটর করতে লাভ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। ব্যবসায়ে আসলেই লাভ হচ্ছে কিনা বুজতে হলে আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে গ্রস প্রফিট এবং নেট প্রফিট নামক এই ২ কন্সেপ্ট।   

গ্রস প্রফিট

আমরা ছোটবেলায় যে লাভ ক্ষতির অংক করতাম তাতে যে লাভ বা প্রফিট বের হত তাই হচ্ছে গ্রস প্রফিট। এখানে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াবলীকে আমলে না নিয়ে বিক্রয়মূল্য হতে শুধু বিক্রয়কৃত পণ্যের উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে লাভ হিসাব করা হয়। ধরা যাক রহিমের একটি দোকান আছে। দোকানে বিক্রয়কৃত মোট পণ্যের মূল্য ১০০,০০০ টাকা। এই পণ্যের ক্রয় মূল্য হচ্ছে ৮০,০০০ টাকা। তাহলে তার লাভ হচ্ছে ২০,০০০ টাকা। এখানে যে লাভের কথা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে গ্রস প্রফিট।

কোন ব্যবসার লাভের সম্ভাবনা ও আর্থিক অবস্থার অন্যতম সূচক হচ্ছে গ্রস প্রফিট। যখন উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, তখন গ্রস প্রফিট কমে যায়। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনার প্রয়োজনীয় অর্থের ঘাটতি দেখা দেয়। আবার উৎপাদন খরচ কমে গেলে গ্রস প্রফিট বেড়ে যায়। 

নেট প্রফিট

অনেক সময় দেখা যায় যে আপাত দৃষ্টিতে লাভ অনেক হয়েছে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে লাভ ততটা হয়নি। এর কারণ হচ্ছে কোন ব্যবসায় কেবল মাত্র পণ্য উৎপাদনেই খরচ হয় না, এছাড়াও আরো নানাবিধ খরচ রয়েছে। এ সম্পর্কে ধারণা দিতে সাহায্য করে নেট প্রফিট। নেট প্রফিটকে অপর কথায় প্রকৃত লাভও বলা হয়। নেট প্রফিটের ক্ষেত্রে কেবল বিক্রয়মূল্য থেকে উৎপাদন খরচই বাদ দেয়া হয় না, এছাড়াও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ যেমন কর (ট্যাক্স), ব্যবসা পরিচালনার খরচ প্রভৃতি বাদ দেয়া হয়। এই সকল কিছু বাদ দেয়ার পর যে পরিমাণ অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে তাই হচ্ছে নেট প্রফিট। এই ধারণটি আরও ভালোভাবে বুঝতে আমরা রহিমের গল্পে ফেরত যাই। ধরা যাক রহিমের দোকানের ভাড়া বাবদ মোট ৫,০০০ টাকা লাগে। তাছাড়াও মালামাল আনা-নেয়া করতে পরিবহন খরচ হয় আরো ২,০০০ টাকা। রহিমের দোকানে করিম সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে এবং তার বেতন দিতে খরচ হয় মোট ৫০০০ টাকা। তাহলে মোট আনুষাঙ্গিক ব্যয় হয় অতিরিক্ত ১২,০০০ টাকা। রহিমের গ্রস প্রফিট ছিল ২০,০০০ টাকা। তাহলে রহিমের নেট প্রফিট হচ্ছে ৮,০০০ টাকা। আবার যদি তার দোকান ভাড়া ১০,০০০ টাকা, পরিবহন খরচ ৪,০০০ টাকা এবং কর্মচারীর বেতন ১০,০০০ টাকা হত, তাহলে আনুষাঙ্গিক ব্যয় হত ২৪,০০০ টাকা। তখন লাভের পরিবর্তে ক্ষতি বা লস হত। একে বলা হয় নেট লস। অর্থাৎ মোটা দাগে প্রতিমাসে ২০,০০০ টাকার লাভ করেও কিন্তু আসলে লস করতে পারে যদি আনুষঙ্গিক খরচ এই লাভের অঙ্ক থেকে বেড়ে যায়।   

নেট প্রফিটই আমাদের এটা বুঝতে সাহায্য করে যে কোন ব্যবসা আসলেই লাভজনক কিনা। কোন ব্যবসার প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বুঝতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। পূর্ববর্তী লাভের সাথে বর্তমান লাভ বা ক্ষতির তুলনা করে ব্যবসার ফিন্যান্সিয়াল হেলথ সম্পর্কে নেট প্রফিট আমাদের ধারণা দেয়। নেট প্রফিট থেকেই আমরা বুঝতে পারি ব্যবসা সম্প্রসারণের সঠিক সময় কখন। ব্যবসা সম্প্রসারণ করা গেলেও কতটুকু বিনিয়োগ করা সম্ভব তাও বুঝা যায় নেট প্রফিট থেকে। আবার যদি নেট লস হয়, তাহলে কতটুকু উৎপাদন কমাতে হবে কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ কমালে লাভ হবে তাও নেট প্রফিট হিসাবের সময় তা থেকে জানা যায়।

কোন উদ্যোক্তার জন্য লাভ এবং লাভের সম্ভাবনার পার্থক্য জানা জরুরী। লাভ হচ্ছে একটি বাস্তব সংখ্যা মাত্র যা আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য নির্দেশ করে। অপর দিকে লাভের সম্ভাবনা বা প্রফিটাবিলিটি হচ্ছে একটি আপেক্ষিক সংখ্যা যা লাভকে ব্যবসার আয়ের শতকরা অনুপাত হিসাবে প্রকাশ করে। নেট প্রফিট দ্বারা লাভের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়, যার উপর ব্যবসার সফলতা নির্ভরশীল। কোন উদ্যোক্তা যখন ঋণের জন্য আবেদন করে, কিংবা নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজে, তখন সর্ব প্রথম তার নেট প্রফিট কত কিংবা তার ব্যবসার লাভের সম্ভাবনা কত তা দেখা হয়। এর উপর ভিত্তি করে ঋণ প্রদানের কিংবা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নেট প্রফিট গ্রস প্রফিটের পার্থক্য জানার প্রয়োজনীয়তা

নেট প্রফিট দ্বারা ব্যবসার প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা এবং উদ্যোক্তার হাতে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় যা গ্রস প্রফিট হতে পাওয়া যায় না। যখন কোন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, তখন তারা ঐ প্রতিষ্ঠানের নেট প্রফিট সম্পর্কে ধারণা চায় যাতে তারা বুঝতে পারে তাদের বিনিয়োগ ফলপ্রসূ হবে কিনা। বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ না হলে অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না।

অপর দিকে, গ্রস প্রফিট উৎপাদন খরচ কমাতে কিংবা পণ্যের মূল্য নির্ণয়ে সাহায্য করে। যদি নেট প্রফিট গ্রস প্রফিটের চেয়ে খুবই কম হয় তাহলে আনুষাঙ্গিক খরচ কমানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে।

তাই সঠিক ইনকাম স্টেটমেন্ট তৈরির জন্য গ্রস প্রফিট ও নেট প্রফিটের সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। এই দুটির সঠিক ধারণা না থাকলে ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট তৈরিতে অসুবিধা সৃষ্টি হবে কিংবা ভুল তথ্য ইনপুট হবে। ফলে ব্যবসার প্রকৃত চিত্র সঠিক ভাবে পরিলক্ষিত হবে না, যা নতুন বিনিয়োগ কিংবা ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।

গ্রস প্রফিট নেট প্রফিট নির্ণয়

উপরের আলোচনা থেকে আমরা গ্রস প্রফিট ও নেট প্রফিট সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। আবার আসুন কিছু ফর্মুলা শিখে ফেলি যেন নিজ নিজ ব্যবসায়ের প্রফিট নির্ণয় সঠিক ভাবে করতে পারিঃ

গ্রস প্রফিট = বিক্রয় মূল্য – পণ্য উৎপাদন খরচ (ক্রয় মূল্য)

একটি সফল ব্যবসায়ের গ্রস প্রফিট সব সময় ধনাত্মক হয়। তার মানে উৎপাদিত পণ্যের খরচ কিংবা পণ্যের ক্রয় মূল্য সব সময় বিক্রয় মূল্যের চেয়ে কম হতে হয়।

নেট প্রফিট (নেট লস) = গ্রস প্রফিট – আনুষাঙ্গিক ব্যয়

আনুষাঙ্গিক ব্যয়ের মধ্যে পরিচালনা খরচ, বিজ্ঞাপন খরচ, অবচয়, কর ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। প্রথমে ব্যবসা পরিচালনার খরচ নির্ণয় করতে হয়। পরবর্তীতে এর সাথে কর, ঋণের ইন্টারেস্ট ইত্যাদি যোগ করে আনুষাঙ্গিক ব্যয় পাওয়া যায়। উক্ত সংখাকে গ্রস প্রফিট থেকে বাদ দিলে নেট প্রফিট পাওয়া যায়। গ্রস প্রফিটের চেয়ে আনুষাঙ্গিক ব্যয় বেশি হলে নেট লস হয়। সাধারণত নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে নেট লস হয় কারণ শুরুতে ব্যবসা থেকে যথেষ্ট আয় হয় না যা দিয়ে সকল খরচ মিটিয়ে লাভ করা যায়। তখন শুরুতে বিনিয়োগকৃত মূলধন থেকে সাপোর্ট নিয়ে ব্যবসায় চালাতে হয়। পরবর্তীতে ২ উপায়ে নেট প্রফিট বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারেঃ উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনে গ্রস প্রফিট বাড়িয়ে এবং উৎপাদন ও ব্যবসা পরিচালনায় কোনরূপ বাঁধা সৃষ্টি না করে আনুষাঙ্গিক খরচ কমানোর মাধ্যমে।  

যথাযথ ভাবে গ্রস প্রফিট ও নেট প্রফিট নির্ণয় সঠিক ইনকাম স্টেটমেন্ট তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ইনকাম স্টেটমেন্ট হচ্ছে একটি উদ্যোগের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। এর উপর নির্ভর করে সেই উদ্যোগের নতুন বিনিয়োগ ও ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা।

ব্যবসা লাভজনক কিনা জানতে সঠিক একাউন্টিংয়ের প্রয়োজনীয়তা

তাই কোন ব্যবসা লাভজনক কিনা তা বুঝতে হলে কেবল মাত্র গ্রস প্রফিটের প্রতি নির্ভরশীল হলে চলবে না, বরং প্রকৃত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেতে চাইলে নেট লাভ তথা প্রকৃত লাভ নির্ণয় করতে হবে। এর উপরেই ব্যবসার সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যথাযথ লাভের ধারণা সহায়তা করে, যা একটি ব্যবসা পরিচালনার অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ। তাই একজন সফল উদ্যোক্তার জন্য সঠিক ভাবে লাভ নির্ণয় করতে পারার কোন বিকল্প নেই। এর জন্য দরকার সঠিক হিসাব রাখার দক্ষতা।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন উদ্যোক্তার পক্ষে তার ব্যবসার সকল লেনলেনের হিসাব রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। কিংবা লেনদেনের হিসাব রাখতে পারলেও গ্রস প্রফিট এবং নেট প্রফিট সম্পর্কে যথযথ ধারণা না থাকায় সঠিক ভাবে ইনকাম স্টেটমেন্ট তৈরি করা কষ্টকর হয়ে যায়। ফলে তখন তার একজন দক্ষ একাউন্ট্যান্ট নিয়োগ দিতে হয় যে তার ব্যবসার সঠিক ইনকাম স্টেটমেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে তার ব্যবসার প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে সাহায্য করে। ফলে উদ্যোক্তার পক্ষে তার ব্যবসা আসলে কতটুকু লাভজনক সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া এবং কিভাবে ব্যবসা আরো লাভজনক করা যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া বহুলাংশে সহজ হয়ে যায়। তাই সকল ব্যবসায় একজন দক্ষ একাউন্ট্যান্টের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

কিন্তু একজন দক্ষ একাউন্ট্যান্ট পাওয়া একটি নতুন উদ্যোগের জন্য যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যয়বহুল। একজন ফুল টাইম একাউন্ট্যান্টের জন্য কমপক্ষে মাসিক ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা ব্যয় করতে হয়, যা নতুন উদ্যোক্তার জন্য বাহুল্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই উদ্যোক্তাদের এমন সমাধান দরকার যা তাকে স্বল্প মূল্যে তার লেনদেন ও আয় এবং ব্যয়ের হিসাব রাখতে সাহায্য করবে এবং পরবর্তীতে তার ইনকাম স্টেটমেন্ট ও লাভ ক্ষতির সঠিক হিসাব দিবে।  

এ ব্যাপারে একজন উদ্যোক্তার সহায়ক হয়ে পাশে আছে SME VAI এর SME Hishab সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারের সাহায্যে একজন উদ্যোক্তা খুবই কম খরচে তার ব্যবসার লেনদেনের সঠিক হিসাব রাখতে সক্ষম হবেন। তার সেলস, ক্যাশ ট্রানজেকশন, ইনভেনটরি কাউন্ট; সব কিছু হবে রিয়াল টাইমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *